জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস , দেবীর রূপ, মন্ত্র
জগদ্ধাত্রী কথার অর্থ যিনি জগত কে ধারণ করেছেন, অর্থাৎ জগতের পালনকারিনী, জগদম্বা।
আমাদের মা আমাদের সমগ্র জগতকে আপনার করে নিয়েছেন, বলেছেন, জগতে কেউ পর নয়, সকলে আপনারজন, তাই তিনি আমাদের জগন্মাতা, আমাদের জগতের পালনকারিনী জগদম্বা।
আমাদের এই বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে, নদীয়া জেলার সদর কৃষ্ণনগরে। অনেক কাল আগেকার কথা।
কিংবদন্তী আছে, নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করা হয়। নজরানা দিতে অপারগ রাজা বন্দী হয়ে মুর্শিদাবাদে (মতান্তরে মুঙ্গেরে) স্থানান্তরিত হন। মুক্তির পর নদীপথে কৃষ্ণনগরে প্রত্যাবর্তনের সময় ঘাটে বিজয়াদশমীর বিসর্জনের বাজনা শুনতে পান রাজা। বুঝতে পারেন যে সেই বছর দুর্গাপূজার সময় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপূজার আয়োজন করতে না পেরে দুঃখিত রাজা সেই রাতেই মা দুর্গাকে স্বপ্নে দেখেন আর আদেশ পান জগদ্ধাত্রীর রূপে পরবর্তী শুক্লানবমী তিথিতে পূজা করার। সেই থেকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে জগদ্ধাত্রী পূজা হয়ে আসছে। রাজবাড়ির দরজা জগদ্ধাত্রী পূজার সময় আজও খোলা থাকে। পূজা পুরনো প্রথা মেনে হয় শুধুমাত্র নবমী তিথিতে।
জগদ্ধাত্রী পূজা আজ কিংবদন্তীর পর্যায়ে চলে গেছে হুগলী জেলার চন্দননগরে। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবর্তক ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। জানা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ান। প্রায় আড়াইশো বছর আগে, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পূজা দেখে মুগ্ধ হয়ে ইন্দ্রনারায়ণ চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টিতে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন করেন। এই পূজা চন্দননগরে আদি পূজা নামে পরিচিত। এখানকার প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল সনাতনরীতির প্রতিমায় সাদা সিংহ এবং বিপরীতমুখী অবস্থানে হাতি। শোনা যায়, বিসর্জনের সময় আদি প্রতিমা জলে পড়লেই শুশুক বা সাপের দেখা পাওয়া যায়। স্থানীয় বিশ্বাসে এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রতা। চন্দননগরের পূজার আর এক বৈশিষ্ট্য হল বিশাল উচ্চতার প্রতিমা আর আলোকসজ্জা। পূজার বিসর্জনও দেখবার মত।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি জগদ্ধাত্রী পূজা
এই একই গল্প উপনিষদ এবং কাত্যায়নীতন্ত্রেও দেখা যায়। তফাতের মধ্যে কেবল উপনিষদে দেবী প্রথমে দেখা দিয়েছিলেন এক যক্ষের বেশে। আর স্বরূপে আবির্ভূতা হওয়ার পর তাঁর নাম জানা গিয়েছিল উমা হৈমবতী। মহিষাসুর বধের কোনও প্রসঙ্গ সেখানে নেই। আবার, কাত্যায়নী তন্ত্রে উমা বা জগদ্ধাত্রী- কোনও নাম পাওয়া যায় না। সেখানে দেবী কেবল হৈমবতী অর্থাৎ স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা। যে দেবী দেবতাদের গর্ব খর্ব করার জন্য রূপধারণ করলেন, উপনিষদ তাঁকে আদিশক্তিরূপেই ব্যাখ্যা করছে। পুরাণেও দুর্গার আবির্ভাবের আগে বেশ কয়েকবার এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে যিনি বিষ্ণুমায়া বা বৈষ্ণবী শক্তি হিসেবেই সুপরিচিতা। বিষ্ণুর মতো জগদ্ধাত্রীর হাতেও রয়েছে শঙ্খ এবং চক্র, অতএব এই দেবীর বিষ্ণুমায়া হওয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। আবার, বিষ্ণুর মতোই তিনিও ধারণ ও পালন করেন এই বিশ্ব
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা
জগদ্ধাত্রী যে দুর্গারই বিকল্প রূপ, তার প্রথম সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া গেল শ্রীশ্রীচণ্ডীতে এসে। সেখানে বলা হল, যুদ্ধের সময় মত্ত মহিষাসুর নানা মায়ারূপ ধরে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন দেবীকে। একবার সেই প্রচেষ্টায় মহিষাসুর ধারণ করেন হস্তীরূপ। সেই হস্তী দেবীকে বধের চেষ্টা করলে দুর্গা ধারণ করেন এক চতুর্ভুজা মূর্তি। চক্রদ্বারা তিনি ছেদন করেন হাতির শুঁড়টি। সেই রূপটিই জগদ্ধাত্রীর। সেই জন্যই ধ্যানমন্ত্রে কোথাও উল্লেখ না থাকলেও মূর্তিতত্ত্বে আমরা দেখছি, জগদ্ধাত্রী বাহন সিংহ এক হস্তীর মৃত শরীরের উপর দাঁড়িয়ে। কখনও বা সেই সিংহ খেলা করে হস্তীর কাটা মাথা নিয়ে। সংস্কৃতে হাতির একটি নাম করী, সেই অনুসারে অসুরটির নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন বলে জগদ্ধাত্রীর অপর নাম করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজোর প্রচলনের পরই চাষাপাড়া বারোয়ারি অর্থাৎ বুড়িমার পুজো শুরু হয়। কথিত আছে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কোনও এক সময় এই পুজোর ব্যয়ভার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তখন নাকি স্বয়ং জগদ্ধাত্রী রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে স্বপ্নাদেশ দেন যে চাষা পাড়ার লেঠেলরা দেবীর পুজোর আয়োজন করবেন। রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই এখানকার পুজো শুরু হয়েছিল বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। তবে বুড়িমা নামটা ৭০ - ৭৫ বছর আগে দেওয়া হয়েছিল বলে প্রবীণদের মত।
এই পুজোর নাম ছড়িয়েছে গোটা দেশে, এমনকি বিদেশের বাঙালি ভক্তদের মধ্যেও। বর্তমানে সাধারণ মানুষের দান এবং চাঁদাতেই বুড়িমার পুজো সম্পন্ন হয়। জগদ্ধাত্রী পুজোর আগের দিন থেকে অসংখ্য ভক্ত রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষ্ণনগরে চলে আসে বুড়িমা দর্শনে।
এই বুড়িমা অত্যন্ত জাগ্রত দেবী বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এই পুজোর ভিড় সামলাতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজোর দিন নগদ অর্থ, শাড়ি এবং সোনা-রূপোর গয়না নিয়ে অনেক মানুষ মনের ইচ্ছে পূরণ করার প্রার্থনা জানিয়ে পুজো দেন। অনেকের মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলেই এখনও পর্যন্ত জাগ্রত দেবীকে সকলে মেনে চলে। কৃষ্ণনগরে বুড়িমাকে নিয়ে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী। দেবীর আগমন থেকে বিসর্জন সবেতেই রয়েছে এক অনন্য সৃষ্টি। বিসর্জনের দিন কৃষ্ণনগরের সমস্ত প্রতিমা আগে বিসর্জন হবে, সবার শেষে বুড়িমাকে ভাসান দেওয়া হয়। বুড়িমার বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকে ভক্তকুল। কড়া পুলিশ প্রহরায় নিরাপত্তারক্ষীরা দেবী জগদ্ধাত্রীকে নিয়ে যান জলঙ্গীর ঘাটে।
এই পুজোর নাম ছড়িয়েছে গোটা দেশে, এমনকি বিদেশের বাঙালি ভক্তদের মধ্যেও। বর্তমানে সাধারণ মানুষের দান এবং চাঁদাতেই বুড়িমার পুজো সম্পন্ন হয়। জগদ্ধাত্রী পুজোর আগের দিন থেকে অসংখ্য ভক্ত রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষ্ণনগরে চলে আসে বুড়িমা দর্শনে।
এই বুড়িমা অত্যন্ত জাগ্রত দেবী বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এই পুজোর ভিড় সামলাতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজোর দিন নগদ অর্থ, শাড়ি এবং সোনা-রূপোর গয়না নিয়ে অনেক মানুষ মনের ইচ্ছে পূরণ করার প্রার্থনা জানিয়ে পুজো দেন। অনেকের মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলেই এখনও পর্যন্ত জাগ্রত দেবীকে সকলে মেনে চলে। কৃষ্ণনগরে বুড়িমাকে নিয়ে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী। দেবীর আগমন থেকে বিসর্জন সবেতেই রয়েছে এক অনন্য সৃষ্টি। বিসর্জনের দিন কৃষ্ণনগরের সমস্ত প্রতিমা আগে বিসর্জন হবে, সবার শেষে বুড়িমাকে ভাসান দেওয়া হয়। বুড়িমার বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকে ভক্তকুল। কড়া পুলিশ প্রহরায় নিরাপত্তারক্ষীরা দেবী জগদ্ধাত্রীকে নিয়ে যান জলঙ্গীর ঘাটে।
কোন মন্তব্য নেই
thanks. please visit again