নবপত্রিকা বা কলাবৌ নিয়ে বিভ্রান্তি। Misconception about kolabou.
বাঙালি সব থেকে বড় উৎসব হল দুর্গাপুজো। আর দুর্গাপূজো মানেই প্রত্যেকটা বাঙালির মনে আনন্দ খুশির বন্যা। মন্ডপে মন্ডপে লোক, নতুন পোশাক পরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরতে যাওয়া। আগে পূজো ছিল চারদিনের। এখন মহালয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় প্যান্ডেল প্যান্ডেলের ঘুরতে যাওয়া। অথচ শাস্ত্র মতে ষষ্ঠীতে হয় মায়ের বোধন আর সপ্তমীর পুজো শুরু হয় নব্য পত্রিকার স্নানের মাধ্যমে। আমাদেরও অনেকের কৌতুহল থাকে নবপত্রিকা বা কলা বউ কি কেন দুর্গাপূজায় তাকে লাগে
নবপত্রিকা প্রচলিত ভাষায় কলাবৌ । গণেশের পাশে একটি কলাগাছকে শাড়ি, মালা, সিঁদুর পড়িয়ে পূজা করা হয় । আসলে দুর্গাদেবী প্রকৃতিস্বরূপা, তিনিই মাতার ন্যায় প্রকৃতিকে পালন করেন। দেবী দুর্গার এই কৃষি, অন্নদাত্রী বা প্রকৃতিস্বরূপা রূপই হলো নবপত্রিকা। এতে নয় রকম গাছের শাখা একত্রে শ্বেত অপরাজিতা ফুল গাছের লতা দ্বারা বেঁধে পূজা করা হয়। ‘নব’ অর্থ নয়, আর ‘পত্রিকা’ অর্থ পাতা। এই নয় প্রকার বৃক্ষ আদিশক্তির নয়জন রূপকে প্রতীকায়িত করে। নয় প্রকার বৃক্ষের অধিষ্ঠাত্রী ৯ জন দেবী রয়েছেন-
কলাগাছ, কালোকচু গাছ, হলুদ গাছ, মানকচু গাছ, ধানগাছ, বেল গাছ, জয়ন্তী গাছ, অশোক গাছ ও ডালিম গাছ- এই নয়টি গাছ যথাক্রমে ব্রহ্মাণীদেবী, দেবী কালী, দেবী দুর্গা, দেবী চামুন্ডা, দেবী লক্ষী, দেবী শিবানী, দেবী জয়ন্তী, শোকরহিতা ও রক্তদন্তিকা-দেবী দুর্গার এ নয় রূপের প্রতিনিধিত্ব করে।
নবপত্রিকা স্বয়ং দেবী দুর্গারই প্রকৃতিস্বরূপিণী রূপ। প্রকৃতি আমাদের কাছে ভগবান তা অনেকটা বোঝা যায় নব পত্রিকা বা কলা বৌ-এর মধ্য দিয়ে। মহাসপ্তমীর দিন সকালে কাছের কোনও নদী বা কোনও জলাশয়ে (নদী বা জলাশয় না থাকলে কোনও মন্দিরে) নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছন পিছন ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পুজোমণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়।
নবপত্রিকার পুজো প্রকৃতপক্ষে শস্যদেবীর পুজো।
পরবর্তীকালের বিভিন্ন দুর্গাপুজোর বিধিতে এই নবপত্রিকার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আসলে এই সবই হল পৌরাণিক দুর্গার সঙ্গে এই শস্যদেবীকে মিলিয়ে দেওয়ার একটা সচেতন চেষ্টা। এই শস্য-মাতা পৃথিবীরই রূপভেদ, সুতরাং আমাদের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে আমাদের দুর্গাপুজোর ভিতরে এখনও সেই আদিমাতা পৃথিবীর পুজো অনেকখানি মিশে রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই
thanks. please visit again