মহাভারত কী ? গঠন এবং সময়কাল ? মহাভারত রচনার প্রসঙ্গ? মহাভারতের ঐতিহাসিক প্রমান কি?
মহাভারত :
মহাভারত সংস্কৃত রচিত প্রাচীন ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্যের অন্যতম।এই মহাকাব্যটি হিন্দুশাস্ত্রের ইতিহাস অংশের অন্তর্গত।মহাভারতের মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পান্ডবদের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। তবে এই আখ্যানভাগের বাইরেও দর্শন ও ভক্তির অধিকাংশ উপাদানই এই মহাকাব্যে সংযোজিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধর্ম , অর্থ ,কাম ও মোক্ষ – এই চার পুরুষার্থ -সংক্রান্ত একটি আলোচনা (১২।১৬১) সংযোজিত হয়েছে এই গ্রন্থে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাভারতের রচয়িতা কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস।
মহাভারতের গঠন এবং সময়কাল সম্পর্কে লেখো।
অনেক গবেষক এই মহাকাব্যের ঐতিহাসিক বিকাশ ও রচনাকালীন স্তরগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন। অধুনা প্রাপ্ত পাঠটির প্রাচীনতম অংশটি মোটামুটি ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ গুপ্তযুগে রচিত হয়। মহাভারতের মূলপাঠটি তার বর্তমান রূপটি পরিগ্রহ করে গুপ্তযুগের প্রথমাংশে (খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী)।মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভরত বংশের মহান উপাখ্যান। গ্রন্থেই উল্লিখিত হয়েছে যে ভারত নামে ২৪,০০০ শ্লোকবিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্রতর আখ্যান থেকে মহাভারত মহাকাব্যের কাহিনিটি বিস্তার লাভ করে। তবে ব্যাস প্রথমে ৮৮০০ শ্লোক বিশিষ্ট জয়া (বিজয়) নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। পরে ব্যাসের শিষ্য বৈষ্যম্পায়ন সেই গ্রন্থকে বৃদ্ধি করে ২৪০০০ শ্লোক বিশিষ্ট ভারত গ্রন্থ রচনা করেন। পরে অপর এক শিষ্য উগ্রশ্রবা: ভারত গ্রন্থকে বৃদ্ধি করে এক লাখ শ্লোক বিশিষ্ট "মহাভারত" গ্রন্থ রচনা করেন। মহাভারতে এক লক্ষ শ্লোক ও দীর্ঘ গদ্যাংশ রয়েছে। এই মহাকাব্যের শব্দসংখ্যা প্রায় আঠারো লক্ষ।মহাভারত মহাকাব্যটির আয়তন ইলিয়াড ও ওডিসি কাব্যদ্বয়ের সম্মিলিত আয়তনের দশগুণ এবং রামায়ণের চারগুণ।
মহাভারত রচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করো।
মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে, মহর্ষি বেদব্যাস এক পবিত্র গুহায় তপস্যা করবার পর মহাভারতের সম্পূর্ণ ঘটনাটি স্মরণ করেন এবং মনে মনেই এর রচনা করেন।ব্যাসদেব চাইলেন এই মহান কাহিনি সিদ্ধিদাতা গণেশের দ্বারা লিপিবদ্ধ হোক। গণেশ লিখতে সম্মত হলেন, কিন্তু তিনি শর্ত করলেন যে, তিনি একবার লেখা শুরু করলে তার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাসদেবের আবৃত্তি একটিবারও থামতে পারবে না। তখন ব্যাসদেব বুদ্ধিমতো পাল্টা একটি শর্ত উপস্থাপনা করলেন – "গণেশ যে শ্লোকটি লিখবেন, তার মর্মার্থ না বুঝে লিখতে পারবেন না"। ভগবান গণেশ এই প্রস্তাব স্বীকার করলেন। এইভাবে ব্যাসদেব মাঝে মাঝে কিছু কঠিন শ্লোক রচনা করে ফেলতেন, যার ফলে গনেশকে শ্লোকটির অর্থ বুঝতে সময় লাগত এবং সেই অবসরে ব্যাসদেব তার পরবর্তী নতুন শ্লোকগুলি ভেবে নিতে পারতেন। এইরূপে সম্পূর্ণ মহাভারত রচনা করতে প্রায় ৩ বৎসর লেগে যায়। ব্যাসদেব প্রথমে অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের জয় সূচক উপাখ্যান যুক্ত ১০০০০০ শ্লোক সমন্বিত আদ্য জয় গ্রন্থ রচনা করেন। সর্বশেষে তিনি ষাট লক্ষ শ্লোক সমন্বিত অপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যে গ্রন্থের ৩০ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, ১৫ লক্ষ শ্লোক পিতৃলোকে, ১৪ লক্ষ রক্ষোযক্ষ লোকে স্থান পেয়েছে এবং অবশিষ্ট মাত্র ১ লক্ষ শ্লোক এই মনুষ্যলোকে ‘মহাভারত’ নামে সমাদৃত হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই
thanks. please visit again