সরস্বতী কে? Who is Saraswati?
পরমেশ্বরের গুণবাচক একটি নাম সরস্বতী।
অনন্ত ভূবনের জ্ঞান যিনি, সমস্ত সংগীতের সুর যিনি, সমস্ত নাট্যকলা এবং সমস্ত কিছুতে যিনি বিদ্যা রুপে প্রতিষ্ঠিত সমস্ত কিছুর জ্ঞানস্রোত যেই মহান ঈশ্বর তার শোভাবর্ধনকারী অনন্ত গুণবাচক নামের মধ্যে এক নাম সরস্বতী।
পবিত্র বেদ এ ঈশ্বরের গুনবাচক একশটি নামের মধ্যে একটি হল সরস্বতী।
ব্যাকরণগত বিশ্লেষণে সরস্বতী অর্থ আমরা পাই-
সরো বিবিধ জ্ঞানং বিদ্যতে যস্যাং সা সরস্বতী
অর্থাত্,যিনি সমগ্র বিশ্বকে দেখেন,দর্শনীয় করান,যিনি সকল শোভার শোভা,যিনি বেদাদী শাস্ত্র,ধার্মিক বিদ্বান এবং যোগীদের সাধনার একমাত্র লক্ষ্য তাঁর নাম সরস্বতী।
সরস্বতী অর্থ বেদবাণী। নিঘন্টুর মধ্যে বাণীর ৫৭ টি যে নাম রয়েছে তার মধ্যে সরস্বতী একটি। অর্থাৎ সরস্বতী অর্থ বেদবাণী। ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ ব্যাখ্যার প্রাচীনতম গ্রন্থ। সেখানে সরস্বতীর অনেক অর্থ রয়েছে।
একা চেতত্ সরস্বতী নদীনাং শুচিৰ্যতী গিরিজঃ
আ সমুদ্ৰাত।
রায়শেতন্তো ভূবনস্য ভুরেঘৃতং পয়ো দুদুহে
নাহুষায়||
(ঋগবেদ ৭|৯৫|২)
অর্থাৎ,
যেমন এক নদী পর্বত থেকে পবিত্র সমুদ্র পর্যন্ত যায়। সেই প্রকার (সরস্বতী এক) এক অদ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ বেদ বাণী জ্ঞানোপদেষ্টা গুরু দ্বারা জনসমূহ রূপ সমুদ্র পর্যন্ত যায় সংসার এবং জগতের প্রভূত ঐশ্বর্য জ্ঞান করিয়ে মানুষ মাত্রকে প্রকাশময়, পান করার যোগ্য রসের তুল্য জ্ঞান রস বাড়ায়।
বেদে সরস্বতী বলতে বেদের জ্ঞান বোঝানো হয়। আবার পরমনিয়ন্তা যিনি এবং যার মাধ্যমে আমরা পরম জ্ঞান বেদ পেয়েছি তাঁকে সরস্বতী নামে ভূষিত করা হয়েছে।ব্যকরনগতভাবে এর অর্থ জ্ঞানের প্রবাহ।একজন সত্যান্বেষীর অন্বেষন এ হৃদয়ে যে ভাব আবিষ্ট হয় তা হচ্ছে এই জ্ঞান।এটাকে কখনো কখনো সত্যদ্রষ্টা সপ্তঋষিকেও প্রতীকিভাবে নির্দেশ করে।কেবল ফুল, তুলসিপাতা, তালের বড়ায় নয়, বেদজ্ঞানরুপি মহান পরমেশ্বর সরস্বতী অবস্থান করুক আমাদের হৃদয়ে ও আমাদের মননে। প্রচলিত পুরোহিত সরস্বতী পূজায় নিয়মের খুব ক্ষুদ্রপাঠে যখন বলেন সবার উদ্দেশ্যে -
-বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব- তখনও আমাদের কাণ্ডজ্ঞান' জন্মায় না। এখানেও বেদজ্ঞান প্রাপ্তির কথাই বলা হয়েছে। সবাই বাণী বন্দনা করে ঠিকই তবে তা ব্যাকবেঞ্চার বালকটির মত অমনোযোগী হয়ে। সে তখনো উপলব্ধি করে না আরে আমার তো প্রয়োজন সর্বপ্রথম বেদ।
কারণ বেদ অখিল ধর্মমূলম। এই সুশীল প্রজাবৃন্দ পূজা মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে বলবে আরে কলিযুগে বেদ অচল। অথচ সেই প্রজাবৃন্দ পূজায় বিদ্যা প্রাপ্তির বন্দনায় পুরোহিত বাবুর মুখে মুখে বলেছে বেদজ্ঞান প্রাপ্তির কথা । এই হল পূজা উদযাপনকারী ব্যক্তিবর্গের ধর্মের প্রতি ঠকানো ভালোবাসা।
আমরা সনাতনীরা সবকিছুকেই উৎসব বা পার্বণ মনে করে আনন্দ উৎসব করতে সিদ্ধহস্ত। একটা উপলক্ষ্য পেলেই হল, তার সাথে কিছু যোগ করে খাওয়াদাওয়া, ঘুরে বেড়ানো,নির্দিষ্ট মৌসুমী রান্না সব মিলিয়ে কালচারের চাপে যেন ধর্মটাই গৌণ হয়ে যায়। ফলাফল এত উৎসব করে, নাচগান করে, সংস্কৃতি মেনেও সনাতনীদের নিজেদের ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান শূন্য।
তাই আসুন পরমেশ্বর এর কাছে প্রার্থনা করি -
ও৩ম্ মেধাং মে বরুনো দদাতি মেধাগ্নিঃ প্রজাপতিঃ।
মেধামিন্দ্রশ্চ বায়ুশ্চ মেধাং ধাতা দদাতি মে স্বাহা।।
-যজুর্বেদ ৩২.১৫
= হে প্রকাশমান,প্রজাপালক প্রভু,আমি যেন মেধা প্রাপ্ত হই,মেধাবুদ্ধি ধারন করতে সক্ষম হই।হে সর্বব্যপক পরমাত্মা,আমি যেন চরাচর জগতের সত্য-অসত্য বিচারের বিবেকযোগ্য বুদ্ধি ও মেধা প্রাপ্ত হই।
আমি আমার ঐতিহ্য রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত তবে পরমেশ্বরকে ভুলে গিয়ে না।
আমি শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তগত ভাবে নিরাকারবাদী তবে আমার ঐতিহ্যকে আমি সন্মান করি পালন করি।
সবার কাছে অনুরোধ সরস্বতী পূজার নামে শুধু মন্দির বা স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে নতুন পোশাক পড়ে গিয়ে পুরোহিতের সাথে বুলি না কেটে নিজের জিহ্বাকে সংযত করি কারণ জিহ্বা সরস্বতী (শতঃ ১২/৯/১/১৪)
নিজের বাণী সংযত করি কারণ বাক সরস্বতী, বাণী সরস্বতী (শতঃ ৭/৫/১/৩১)
কোন মন্তব্য নেই
thanks. please visit again