Header Ads

Header ADS

মা ষষ্ঠী কে?

মা ষষ্ঠী 

      সন্তান লাভ ও তাদের মঙ্গল কামনায় হিন্দুরা মা ষষ্ঠীর পুজো করেন ৷ তিনি সিদ্ধিদাত্রী , শান্তি স্বরূপা , কল্যাণময়ী , বরাভয়দায়িনী , গৌরবর্ণা ,নিত্যা এবং সব ঐশ্বর্য প্রদায়িনী ৷ তিনি বালকগণের অধিষ্ঠাত্রী ও বালকদায়িনী বিষ্ণুমায়া।প্রকৃতির ষষ্ঠকলা ৷তাই , দেবী ভাগবতে বলা হয়েছে , ষষ্ঠাংশা প্রকৃতের্যে চ সা চ ষষ্ঠী প্রকীর্তিতা ৷ বালকানামধিষ্ঠাত্রী বিষ্ণুমায়া চ বালদা ৷ ঐ পুরাণে তাঁকে দেবসেনা বলা হয়েছে ৷ আসলে ভগবতী মহামায়া এই রূপে তিনি সৃষ্টি পরিচালনা করেন ৷


 মহাভারতের সভাপর্বে তাঁর কথা বলা হয়েছে ৷ যিনি ব্রহ্মার সভায় থাকেন ৷ তিনি কার্তিকের প্রথমা পত্নী ৷  ব্রহ্মবৈর্বত পুরাণ মতে প্রিয়ব্রত নামের এক রাজা মর্ত্যে তাঁর পুজো শুরু করেন বলে জানা যায় ৷তাঁর বাহন বিড়াল ৷ আমরা জানি বিড়াল তার জিভ দিয়ে চেটে সন্তানের দেহ পরিষ্কার করে এবং বাচ্চাকে যত্ন করে দুধ দেয় ৷ এছাড়া প্রাচীন আয়ুর্বেদে বিড়ালের দুধকে স্ত্রীরোগের ওষুধ মনে করা হত ৷তাই ষষ্ঠীর বাহন বিড়াল ৷ষষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে মাতৃত্বের সব গুণ ৷প্রতিমাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বিভিন্ন নামে মা ষষ্ঠীর বিভিন্ন উপাচারে পূজা  বা ব্রত করা হয় ৷
     সনাতনী নারীরা বট বা অশথ্ব তলায় প্রতিমা গড়ে , আঁকা মূর্তি , পিটুলির মূর্তি , শিল দিয়ে তেল হলুদ , ঘট , দুর্বা ঘাস , ডোর ,বটের ডাল দিয়ে ওঁ হ্রীং ষষ্ঠীদেব্যৈয় স্বাহা , ওঁ শাস্থামে চন্ডী বধূ কার্তিক প্রিয়ে নমঃ স্তুতে  বলে বা মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে ব্রত পালন করেন ৷ যেমন -বৈশাখে -ধূলা ষষ্ঠী , জ্যৈষ্ঠে - অরণ্য ষষ্ঠী  বা জামাই ষষ্ঠী , আষাঢ়ে -কোড়া ষষ্ঠী , শ্রাবণে লোটন বা লুন্ঠন ষষ্ঠী , ভাদ্রে -মন্থন চাপড়া  ষষ্ঠী , আশ্বিনে -
বোধন বা দুর্গা ষষ্ঠী ,অগ্রহায়ণে - মূলা ষষ্ঠী , পৌষে - পাটাই ষষ্ঠী , মাঘে - গোটা ষষ্ঠী বা শীতল বা শিল ষষ্ঠী , ফাল্গুনে - অশোক ষষ্ঠী  ৷আর চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন সতীর দেহত্যাগের পর নীলধ্বজ রাজার সুন্দরী কন্যা নীলাবতী পরমেশ্বরী বা নীলচন্দ্রিকা রূপ গ্রহণ করে শিবের সঙ্গে বিয়ে উপলক্ষে হয় নীলষষ্ঠী  ৷এছাড়া শিশুর জন্মের পর বিভিন্ন দিনে একেক ভাবে তাঁর আরাধনা করা হয় ৷ জন্মের দু'দিন পরে সূতিকা ষষ্ঠী , ষষ্ঠদিনে হয় ষেটেরা , আগে ঐদিন আঁতুর শুদ্ধ হত ৷ মা ও বাচ্চা স্নান করে  হয়  ঘাট ষষ্ঠী , একুশ দিনে , একুশেষষ্ঠী এবং বারো বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি জন্মতিথিতে  জল ষষ্ঠী পুজো করা হয় ৷ অরণ্য ষষ্ঠীতে বনে গিয়ে বিন্দ্যবাসিনী স্কন্দ ষষ্ঠীর পুজো হত ৷ ভাদ্র মাসে রাঢ় বঙ্গে চাষীরা গোবরষষ্ঠী পালন করে ধান ক্ষেতের এক কোণে ৷জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের সাবিত্রী চতুর্দশী তিথিতে বৌ নিজের স্বামীর দীর্ঘজীবন কামনা করে যমরাজের আরাধনা করতেন ৷ তাই পরবর্তীতে শাশুড়ি দ্বারা পালিত জামাই ষষ্ঠীতে পরিবর্তিত হয় ৷  জামি মানে কুলবধূ বা সধবা নারী ৷ যার বহুবচন জাময়ঃ ৷ জাময়ঃ ষষ্ঠী হয়েছে জামাই ষষ্ঠী ৷আগে হিন্দু সমাজে জন্মদিন পালনের রেওয়াজ ছিল না ৷ আমাদের এই উৎসব হত জন্ম তিথিতে ৷কার্তিক ও চৈত্র শুক্লা ষষ্ঠীতে ছট পুজোয় যে কঠোর ব্রত পালন করা হয় তা সূর্য দেবতার সঙ্গে ছঠী মাঈয়া বা ষষ্ঠীর ব্রত ৷ ওড়িষায় সন্তান জন্মের ৬ এবং ২১ দিনে ষষ্ঠীর পুজো হয় ৷ষষ্ঠী পুজোর প্রচলন বেশ পুরানো বোঝা যায় শুধু আঙুল টিপে তৈরী ষষ্ঠী পুতুল দেখে ৷ সিন্ধু সভ্যতাতে কিছু মূর্তি দেখেও  এমন ধারণা হয় ৷অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় সভ্যতাতে ও পুরাকালে এঁর পুজো হত ৷  নিজের সন্তানের মঙ্গল কামনাতো চিরকালীন ,শাশ্বত ও সব দেশের ৷ওড়িশার বালেশ্বরে বেশ পুরানো ষষ্ঠী মূর্তি পাওয়া গেছে ৷বৌদ্ধ হারিতী দেবী ও জৈন দেবী নৈগমেসার সঙ্গেও এর মিল দেখা যায় ৷ বায়ু পুরাণে ষষ্ঠী ৪৯ টি দেবীর অন্যতমা ষষ্ঠী ৷ এক পুরাণে আবার তিনি সব মাতৃদেবীর মধ্যে আরাধ্যতমা  বলা হয়েছে ৷ যাজ্ঞবাল্ক্য স্মৃতিতে ও পদ্মপুরাণে স্কন্দ বা কার্তিকের স্ত্রী হিসাবে ষষ্ঠীর উল্লেখ রয়েছে ৷ আবার ষষ্ঠীর মত ঘাঘর বুড়ি , খুনিয়া বুড়ি ও  ভাঁড়রা বুড়ির পুজো অঞ্চল ভেদে দেখা যায় ৷ ষষ্ঠীমঙ্গল একসময় বাংলা ও ওড়িশায় বেশ জনপ্রিয় ছিল ৷ দুর্গা ষষ্ঠী বা নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে ষষ্ঠীর অনেক আচার পালিত হয় ৷ ঐদিন মা দুর্গা মর্ত্যে আসেন ৷ষষ্ঠিসহ সামাজিক লোকাচার  নানা প্রথা ও রীতি থেকেই হিন্দু ধর্মের উৎসে যাওয়া যায়।

কোন মন্তব্য নেই

thanks. please visit again

Blogger দ্বারা পরিচালিত.