দুর্গাপুজো তে বেশ্যামৃত্তিকা কেন অপরিহার্য? Why prostitute soil is mandatory in durgapuja?
বেশ্যাদ্বারমৃদা
দুর্গামহোৎসবের মহাস্নানের এক অতি অপরিহার্য বস্তু এই মৃদা বা মৃত্তিকা। দশবিধমৃদার অন্যতম হল এটি।অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে কেন এমন বিচিত্র বৈচিত্র্যময় নিয়ম ,সাধারণ দৃষ্টিতে যারা অশুচি তাদের দ্বারের বা ওই স্থানের মৃদায় জগদম্বা যিনি পরাশুচি তিনি স্নান করবেন !!?.
বেশ্যা সাধারনের কথায় যারা সমাজের বুকে পতিতা,অস্পৃশ্য ,কিন্তু শিব ও শাস্ত্রকার গন বেশ্যার কি বেখ্যা দিচ্ছেন তা অতি চমকপ্রদ । বেশ্যা এই শব্দ তান্ত্রিক পরিভাবিক বেশ্যা। তান্ত্রিক বীরভাব সাধক যে সকল বিশেষ বিশেষ সাধিকা স্ত্রীগণকে পূজাদি করিয়া থাকেন এবং যাহারা সংস্কৃত(অভিষিক্ত) সাধকের শক্তি রূপে পরিগণিত ও নিজেরাও তপস্বিনী ও সাধন কর্মে সিদ্ধি লাভ করন ,সেই সমস্ত কুলনারী-স্ত্রী গণকে তন্ত্রে বেশ্যা বলে।গুপ্তসাধন তন্ত্রের ১৪ পটলে বেশ্যার লক্ষণ নির্দ্দেশ করে বলছে- এবংবিধা ভবেদ্বেশ্যা নবেশ্যা কুলটা প্রিয়ে।কুলটাসঙ্গমাদ্দেবি রৌরবং নরকং ব্রজেৎ।।
অর্থ-দেবী ! ন্যাসাদি যাগ তৎপরা বা সংস্কৃত স্ত্রী কে বেশ্যা জানবে,কুলটা বেশ্যা নয়। এই কুলটা সঙ্গমলিপ্ত ব্যক্তি রৌরব নরকে যায়।অর্থাৎ আভিষিক্তা শক্তি তন্ত্রে বেশ্যা নামসঙ্গিকা।আবার কুলপ্রকাশ তন্ত্রের ২৪ পটলে আছে -যে দশমহাবিদ্যার ও উপবিদ্যা গণের আভরণগণি বেশ্যা নামে পরিচিত। যেমন মহাবিদ্যা আদ্যার কাল্যাদির যেগিনী গণ আর উপবিদ্যা রাধার ললিতা ,বিশাখা এনার।নিরুত্তর তন্ত্রে ১৪ পটলের ৮ম শ্লোক বলছে -"বেশ্যাবৎ ভ্রমতে যস্মাৎ তস্মাৎ বেশ্যা প্রকীর্ত্তিতা"।-অর্থাৎ যেহেতু এই আভরনেরা বেশ্যাবৎ ভ্রমন করে তাই তারা বেশ্যা নামে পরিচিত। ৭ম শ্লোকে আছে-"দিবাশক্তির্বীরশক্তি স্তাসাং সংজ্ঞা প্রকীর্ত্তিতা'। বেশ্যাগণ আবার দিব্য ও বীর শক্তি নামে অভিহিত। আবার ১৬ শ্লোকে বলছে-
এবম্বিধা পুরশ্চর্য্যা বেশ্যায়াশ্চ কুলেশ্বরী।
এবম্বিধা ভবেদ্বেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে।।
অর্থ - তপযজ্ঞ পুরশ্চরণ সমাহিতা স্ত্রী বেশ্যা।কুলটারূপ ইহারা পুরুষগামিনী বেশ্যা নয়। সাক্ষাৎ শিব ও বাগীশ্বর স্বরূপ শ্রী শ্রী জগন্মোহন তর্কালঙ্কার বলেছেন-"এই বেশ্যা যে কে তা সাধারণে জ্ঞাত নহেন। অনেকে অজ্ঞাননিবন্ধন বেশ্যাদ্বারের মৃত্তিকা স্থলে কুলটার দ্বারের মৃত্তিকা ব্যাবহার করিয়া থাকেন। পুর্নাভিষিক্ত শক্তি কোন মহাবিদ্যা র আবরণ দেবতার মধ্যে সন্নিবিষ্টা হয়েন বলিয়া তিনিও বেশ্যা এই উচ্চ উপাধি প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। এই বেশ্যা সাত প্রকার গুপ্তবেশ্যা, মহাবেশ্যা, কুলবেশ্যা,রাজবেশ্যা,ব্রহ্মবেশ্যা ও সর্ব্ববেশ্যা এই সপ্তবিধ বেশ্যার লক্ষণ গুপ্তসাধন তন্ত্রে এবং নিরুত্তর তন্ত্রে বিবৃত আছে ।
কুমারী তন্ত্রে ৬পটলে নবকন্যা বিধানে এই বেশ্যা কন্যার উল্লেখ আছে তো এবার আপনাদের এই বেশ্যা কন্যা কে তা নিয়ে সংশয় থাকবেনা আশাকরি। এটি শাস্ত্রীয় দিক।
এবার আসি তত্ত্বকেন্দ্রীক দিকটিতে যদি বেশ্যাদ্বারমৃদা লাগেও ,তবে কেন লাগবে!? কেন এই বেশ্যাদ্বারমৃদা লাগে দেবীর স্নানে বালক স্মৃতি তে বলছে -
তারং মায়া কাত্যায়ন্যৈ হৃদয়ঃ ইতি মন্ত্রেন বেশ্যাদ্বারমৃদা নীত্বা স্নাপয়েৎ। অর্থাৎ-তার (ওঁ) মায়া(হ্রীঁ)কাত্যায়ন্যৈ হৃদয়(নমঃ)
এই মন্ত্রে বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা নিয়ে স্নান করাবে। আসলে দুর্গা পূজা হল মহাপূজা,এই পূজায় সব সমান তাই এই পূজায় যেমন লাগে মদন্মত্তো গজের দন্তে উৎপাটিত মৃত্তিকা তেমনি লাগে কর্মতৎপর অতিক্ষুদ্র কীট বল্মীকের খননে উৎপাদিত মৃত্তিকা।আবার যেমন পাঁচ অতি তিতো পঞ্চকষায় আবার তেমনি লাগে পঞ্চামৃত। ঠিক এইরূপ যেমেন লাগে পুণ্য ধন্য সর্ব্বতীর্থমৃদা বা আতি পুণ্যক্ষেত্রের মৃত্তিকা আবার তেমনি লাগে আস্পৃশ্য পতিতার গৃহের তথা বেশ্যাদ্বারমৃদা । এইতো মা ,এইতো তার প্রকাশ ,তাঁর ভাবতো এমনি তার কাছে কেউ ছোট কেউ বড়ো নয়।সবাই সমান তাইতো বিদ্রোহী কবি গেয়েছেন-মোরা এক জননীর সন্তান সব মানি ভাঙবো দেয়াল ভুলবো হানাহানি।তাইতো এদুর্গা মহাপূজা ,এ পূজায় সবাই এক হয়ে যায় ধনী দরিদ্র সব একাকার হয়ে আর্থিক, সামাজিক ও সর্বিক সমতার সৃষ্টি হয়ে ভারত প্রেমময় বৈচিত্রের উপসংহার আখিলানন্দে পরিনামিত হয়।
কোন মন্তব্য নেই
thanks. please visit again