মাঘী পুর্ণিমা। Maghi Purnima.
আমরা সকলে জানি, প্রতি মাসে একবার করে পূর্ণিমা হয়। এই পূর্ণিমা পৃথিবীর সাপেক্ষে চাদের অবস্থানের জন্য হয়ে থাকে।যঃ পরমাে বিকর্ষঃ সূর্যাচন্দ্রমসােঃ সা পৌর্ণমা যঃ পরমঃ সঙ্কর্ষঃ সামাবাস্যা।।যখন সূর্য ও চন্দ্র উভয়ই পরস্পর পরম বিকর্ষ অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে বিপরীত দিকে অবস্থান করে, তখন সেটিই পূর্ণিমা।
মাঘী পূর্ণিমার তাৎপর্য ও মাহাত্ম বৌদ্ধ মতে : এটি বৌদ্ধদের জন্য অত্যন্ত শোকাবহ একটি ঘটনা। এই পূর্ণিমা তিথিতেই মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ তার মহাপরিনির্বাণের দিন ঘোষণা করেন। এই তিথিতে মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ তার শিষ্যদের উদ্দেশে অন্তিম ভাষণ প্রদান করেন। সারা বিশ্বের বৌদ্ধরা এই মহান তিথিটি নানা অনিত্য সভা এবং পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে।
মাঘীপূর্ণিমার তাৎপর্য হিন্দু মতে : পুরাকালে কান্তিকা নগরীতে ধনেশ্বর নামে একজন গরীব ব্রাহ্মণ বাস করতেন। ব্রাহ্মণের কোনও সন্তান ছিলনা। ব্রাহ্মণের দিন কাটছিল খুবই দুঃখে। ভিক্ষা করে কোনও রকমে দিন গুজরান হচ্ছিল। এমনই একদিন ভিক্ষায় বের হলেন ব্রাহ্মন, সেসময় নগরীর বাইরে কোনও এক জনৈক ধনীর বাড়িতে তিনি ঢুকলেন ভিক্ষা করতে। কিন্তু সেখান থেকে ব্রাহ্মনকে খালি হাতেই ফিরতে হল কারণ নিঃসন্তান ব্রাহ্মনকে ভিক্ষা দিতে চাননি বাড়ির মালিক। ব্রাহ্মন ঘরে ফিরে কাঁদতে লাগল আর তার স্ত্রীকে সবটা খুলে বলল। সব শুনে স্ত্রী রূপবতী উপায় খুঁজতে লাগল। তখনই জনৈক একজন এসে বলল তোমরা মা কালীর পুজো কর এবং চন্দ্রিকা দেবীর আরাধনা কর, এতে তোমরা সন্তান লাভ করতে পারবে। তাই শুনে ব্রাহ্মন নাকি মাঘী পূর্নিমার এই পুজো করে এবং ব্রাহ্মন দম্পতির সন্তান লাভ হয়।
মাঘ মাসে পূজার্চনা, দান-পুণ্যের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিও সনাতন ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। এই পূর্ণিমা আবার মাঘী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। পূজার্চনা, দান, স্নানের দিক দিয়ে এই পূর্ণিমা অত্যন্ত বিশেষ। মাঘ পূর্ণিমা তিথিতে পবিত্র নদীতে স্নান করার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই তিথিতে দেবতারা মর্ত্যলোকে ভ্রমণ করতে আসেন। এই তিথিতে গঙ্গা স্নান ও দান করলে দেবতারা প্রসন্ন হন। মাঘ পূর্ণিমায় ব্রহ্ম মুহূর্তে গঙ্গা স্নান করা উচিত। স্নানের পর ওম নমো নারায়ণঃ মন্ত্র জপ করুন। তার পর সূর্যকে অর্ঘ্য দিন। জলে তিল মিশিয়ে তর্পণ করুন। এর পর পুজো শুরু করতে হবে। পঞ্চামৃত, পান, তিল, মৌলী সুতো, রোলী, ফল, ফুল, কুমকুম, পঞ্চগব্য, সুপুরি, দূর্বা ইত্যাদি অর্পণ করুন। অবশেষে আরতী ও প্রার্থনার রীতি প্রচলিত আছে। পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীর পুজো করা উচিত। পূর্ণিমা তিথিতে দান, উপদান ও চন্দ্রকে অর্ঘ্য দেওয়া শুভ। পাশাপাশি এই তিথিতে চন্দ্র স্তোত্র জপ করা শুভ। মঘা নক্ষত্রের নামে মাঘ মাসের উৎপত্তি হয়। এই মাসের পূর্ণিমা তিথিটি মাঘ বা মাঘী পূর্ণিমা নামে পরিচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মাঘ মাসে দেবতারা পৃথিবীতে আসেন এবং মনুষ্য রূপ ধারণ করে প্রয়াগরাজে স্নান, দান ও জপ করেন। তাই এই তিথিতে গঙ্গাস্নান করলে সমস্ত মনস্কামনা পূরণ হয়। অবশেষে মোক্ষ লাভ করা যায়। শাস্ত্র মতে মাঘ পূর্ণিমায় পুষ্য নক্ষত্র থাকলে এই তিথির মাহাত্ম্য বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
কোন মন্তব্য নেই
thanks. please visit again