Header Ads

Header ADS

দুর্গাপুজোকে কেন মহাপুজো বলা হয়? Why durgapujo is called Mahapujo?

দূর্গাপূজা কেন মহাপূজা?----

"যাদেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্হিতা। নমোস্তস্যৈঃ নমোস্তস্যৈঃ নমস্তস্যেঃ নমো নমঃ।।(শ্রীশ্রী চন্ডী-৫/৩৪)

দুর্গা কে?---দ-কার দৈত্যনাশ,উ-কারে বিঘ্ন নাশ,,র-কারে রোগ নাশ,,গ-কারে পাপ নাশ,আ- কারে ভয় নাশ করেন বলেই তিনিদুর্গা। যিনি সকলদূর্গতি হরণ করেন তিনি দূর্গা। যিনি দূর্গম অসুর কে দমন করেছেন তিনিই দূর্গা।অর্থাৎ যিনি দারিদ্র , নিরক্ষরতা,রোগ ব্যধি,প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রভৃতি সকল দূর্গতি নাশ করেন তিনিই মা দুর্গা। তাঁর দশ হাত দশদিকের প্রতীক,দশহাতে দশ রকমের অস্ত্র  যেমন কুঠার-সভ্যতার, চক্র-অগ্রগতির,সাপ- বংশবৃদ্ধির, তলোয়ার- বিচারবুদ্ধির, বর্শা -নিরাপত্তার,  পদ্মফুল- আত্মোন্নতির,,শংখ- জীবনসংগ্রামের প্রতীক রূপে বিবেচিত। দেবীর দশহাতে  অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের তাৎপর্য  যে,শত্রুকে পরাজিত করতে হলে সম্মিলিত ভাবে দশদিক হতে প্রতিরোধ করতে হয়। প্রকৃতি ও জীবজগতের হিতসাধন  ও মঙ্গলেচ্ছায় এিনয়ন দিয়ে তিনি পর্যবেক্ষণ করছেন অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যত।দূর্গাপূজাকে মহাপূজা বলা হয় এইজন্য যে, পূজাতে জ্ঞান শক্তি-( সরস্বতী) ,ক্ষাত্র শক্তি,-(কার্তিক) ,জনশক্তি-(গণেশ,) ধনশক্তি- (  লক্ষ্মী)  কে তাঁর  পুত্রকন্যার অবয়বে তাঁদের সাথে করেতিনি পিতৃআলয়ে আসেন প্রতিবছরে বসুন্ধরায় অন্যায়কে দূরীভূত করে সত্যকে/ন্যায়কে প্রতিস্ঠিত করেন।যেজন্য তাঁর আগমনবাঙালির জীবন,সমাজ,সংস্কৃতির অঙ্গনে একটি আলোড়নসৃষ্টিকারী নন্দিত মহাঘটনা , যার সাথে জ্ঞানশক্তি, অর্থশক্তি,ক্ষাত্রশক্তি শ্রমজনশক্তির অর্থাৎ  ব্রাহ্মন,বৈশ্য,ক্ষত্রিয়,শুদ্র/অন্ত্যজ  সকল জাতি,বর্ণ,নির্বিশেষের সহজাত অংশগ্রহন /সমন্বয় রয়েছে। দেবীদুর্গার প্রতিমা কাঠামোতে ব্রাক্ষ্মন,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্রজাতি সমূহের ঐক্যবদ্ধ রূপকল্পকে সমুজ্জ্বল করে।  যা সমৃদ্ধ জাতিগঠনে  সংহতিশক্তিরূপে উদভাসিত। এই দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে র মাধ্যমে জাত,বর্ণ,ধর্ম নির্বিশেষেসকল হিন্দুকে সংঘবদ্ধ করার একমাত্র  উপায়। এই জন্য দুর্গাপূজাকে মহাপূজাও বলা যায়। আগে রাজা জমিদাররা এই দুর্গাপূজা আড়ম্বরে  করতেন। ১৫৮০ সালে  , রাজশাহীর তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ন মহাড়ম্বরে  প্রায়   নয়লক্ষ টাকাব্যয়ে     মহিষা সুর মর্দিনী দুর্গা পূজা পূর্ব বঙ্গে করেন।


    পরবর্তী তে  আনুমানিক  ১৭৯০ সালে পশ্চিম বঙ্গের হুগলি জেলার বারোজন ইয়ার বা বন্ধুরাসংঘবদ্ধভাবে দুর্গাপূজা করলে তখন থেকে জগতজননী দেবীদুর্গা ধনীর আঙিনা থেকে সাধারন সন্তানদের ঘরে আগমন করেন  এবং তখন থেকে  বারোয়ারী  বা সার্বজনীন ভাবে বাঙালির ঘরেঘরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বহুর মধ্যে এক। আবার একের মধ্যে বহু। তিনি বাহন রজোগুণাত্বক সিংহকে নিয়ন্ত্রণ করে লোকস্থিতি  রক্ষা করছেন। স্বত্ত্বগুনের সাথে তমোগুণের সমন্বয় ঘটিয়ে দুর্গা তমোগুণান্বিত মহিষাসুর কে বধ করছেন।   অসুর হলো অন্যায়-অবিচার, নিপীড়ন -নির্যাতন অশুভ-অকল্যাণ, অধর্মের প্রতীক। মাদুর্গা মহিষারূপী অসুরকে বধকরে সত্যও ন্যায়ের, শুভও মঙ্গলের,ধর্মও  মানবতারপ্রতিষ্ঠাকরে মানব সমাজকে রক্ষা করেন।
,দেবী দুর্গাকে শস্যদেবীও বলা হয়। সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পাও মোহেনজোদারোর ধংশস্তুুপহতে দুর্গার অনুরূপ  পৃথিবীদেবীমূর্তি পাওয়া যায়,তাতে প্রমানিত হয়যে অতীব প্রাচীন কাল হতে তাঁকে শস্যদেবী "রূপে পূজা করা হতো। এই পূজায় নবপত্রিকার (নয়টি গাছের পাতা যেমন কলা, কচু,  হলুদ,জয়ন্তী, বেল, ডালিম,অশোক,মান, ও  ধান) পূজা  অপরিহার্য।  একটি কলাগাছে বাকি আটটিসমূল উদ্ভিদ  বা সপত্র শাখা একত্রিত করে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেধেঁ লালপাড়সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দিয়ে সিঁদুর  মাখিয়ে দেবীর ডানদিকে গনেশের পাশে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়।তাকেকলা বউ(অনেকে ভুলকরে গণেশের বউও বলে) বা শস্যদেবী, কৃষিদেবী বা পৃথিবীদেবীও বলা হয়।

    শারদীয় মহোৎসবে দেবীভগবতী ভুক্তি ও মুক্তি অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পূজিতা।। তিনিএক ও অদ্বিতীয়া।  তিনি বিশ্বশক্তি তথা শক্তি এবংসর্বশক্তি নিয়ন্ত্রী।মাতৃশক্তির মাধ্যমে তিনি সর্বশক্তির জাগরন ঘটিয়েছেন। শ্রীশ্রী চন্ডীপুরান মতে তিনিই ব্রহ্মময়ী, তিনিই সর্বশক্তিরূপিণী মা পরাশক্তি মহামায়া,মাকালী।তিনিই পরমাপ্রকৃতি ও পরমপুরুষ এবং অভিন্ন। আত্মশক্তির জাগরণই "বোধন"।  সমাজের সকলের সমান অংশীদারত্ব ও সমঅধিকার চর্চার এক অনন্য উৎসব। সামাজিক সংহতি ওরাষ্ট্রীয় ঐক্যকাঠামোকে সুসমন্বিত সুশৃঙ্খলকরার উৎসব এই শারদোৎসব। 

লক্ষ্মী কে? তার বাহন কেন পেঁচা? 
দেবী দূর্গার ডানে অবস্হিত লক্ষী ধন,ঐশ্চর্যের দেবী। তাঁর বাহন পেঁচা যে দিনের বেলা দেখতে পায় না।যারা তত্ত্ববিষয়ে অজ্ঞ,যারাধনবান,তারা পেচকধর্মী অর্থাৎ আপাত দৃষ্টিতে অন্ধ।অর্থাৎ অর্থার্জনকরতে হলে  অন্ধের মতো আচরন করতে হয়(শুধু অর্থার্জন করাই একমাত্র লক্ষ্য বাউদ্দেশ্য।

কার্তিক কে এবং ময়ুর কেন তা্ঁর বাহন?
কার্তিক শৌর্যবীর্যের প্রতীক।সেক্ষাত্রশক্তির প্রতিনিধি। তাঁর বাহন ময়ূর হচ্ছে সর্পখাদক। কোন মেয়ে ময়ূরী বিরুদ্ধ শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে পুরুষময়ূর যুদ্ধ করে শত্রুরহাত থেকে মেয়েময়ূরকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত যুদ্ধ থেকে বিরত হবে না। এজন্য সে কার্তিকের বাহন।

সরস্বতী কে এবং হা্ঁস কেন তাঁর বাহন?
বিদ্যা ও জ্ঞানের প্রতীক দেবী সরস্বতী। তাঁর বাহন হাঁস।  হাঁসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে তাকে জলও দুধমিশিয়ে একত্রে খেতে দিলে সে শুধুদুধটুকু খাবে কিন্তু জলটা পড়ে থাকবে। অর্থাৎ সার গ্রহন করে অসার কে বর্জন করতে হবে।

 গনেশ কে এবং ইঁদুর  কেন তাঁর বাহন
গণ+ঈশ >গণেশ,জনগনের মঙ্গল কামী দেবতা,সিদ্ধিদাতা।তিনি জনগনের প্রতিনিধি।তাঁর বাহন ইঁদুর  কেননা ইঁদুর  কর্মের, ধের্যের,অধ্যবসায়, উদ্যমেরপ্রতীক। একজন জননেতাকে অনুরূপ গুনাবলীর অধিকারী হতে হবে।তার মুখে ইঁদুরের মত  শক্তি থাকতে হবে। ইঁদুর  মায়া ও অস্টপাশ ছেদনের প্রতীকওবটে।সে অতি ছোট প্রাণীহলেও তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী  সে গণেশের বাহন হিসেবে বিবেচিত।

  পরিশেষে, পূজা করার অর্থই হলো আত্ম- শুদ্ধি--আত্মজাগরন। কিন্তু আমাদের পূজোৎসব হচ্ছে অশালীন নাচগান,ডিজে নাচ,মাদকাসক্তি,ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা (প্রণামী) আদায়, তামসিকতাচ্ছন্ন প্রতিযোগিতার বহুল উৎসব। তাই ভক্তের সাত্ত্বিকতা আর পবিত্রতা না থাকলে দুর্গাপূজা হয় না।  তাই আহ্বান জানাই বিনীতকরজোড়ে  সকল আসুরিকীতা পরিহার করে  সকলে জাতপাতবর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে  শুভচেতনার ধারক বাহক হয়ে আধ্যাত্মিকআলোয় উদ্ভাসিত হয়ে শ্রেষ্ঠতম ও প্রাচীনতম মাতৃপূজায় সমার্পিত হই। 

কোন মন্তব্য নেই

thanks. please visit again

Blogger দ্বারা পরিচালিত.