Header Ads

Header ADS

ভগবান শিবের স্বরূপ বর্ণনা করো। Describe the exact form of God Shiva.

যোগিক ঐতিহ্যে শিবকে কাল  হিসাবে উল্লেখ করা হয়। শিবের সমস্ত প্রকাশের মধ্যে কাল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কাল শুধু মহাশূন্যের অন্তহীন অন্ধকার নয়। সময়কেও কাল বলা হয়। তাই যোগ বিজ্ঞান সময় এবং স্থান উভয়ের জন্য একই শব্দ ব্যবহার করে। কারণ এগুলোকে আলাদা হিসেবে দেখা হয় না। সময়ের একটি দিক সৃষ্টির ভৌত প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত। ভৌত বাস্তবতা চক্রাকার, কিন্তু সময়ের আরও একটি মৌলিক মাত্রা আছে যা চক্রাকারের বাইরে। এই অবর্ণনীয় মাত্রাই সমগ্র মহাবিশ্বকে একত্রে ধারণ করে। এই চক্রাতীত কাল অবিনাশি, যাকে যোগ সংস্কৃতি মহাকাল বলে অভিহিত করে। 




কাল-এর স্পন্দনশীল অবস্থাকে বলা হয় কাল ভৈরব   – যখন কাল ভৈরব একেবারে স্থির হয়ে যায়, তখন সে তার চিরন্তন রূপ মৌলিক মহাকাল-এ ফিরে আসে। যখন চক্রাকার অস্তিত্বের শেষ অবশেষটিও বিনষ্ট হয়, তখন মহাকালই অবশিষ্ট থাকেন। এটি অস্তিত্বের চূড়ান্ত প্রকৃতি, চক্রাতীত সময়। সময়ের এক বিশেষ মাত্রা টিকে থাকে, যখন স্থান ধ্বংস হয়ে যায়, যেখানে সবকিছু চিরন্তন - “এখানে এবং এই মুহূর্তে”। এটিই হল নিখাদ, স্পন্দশীল, অন্তহীন জীবনের ক্ষেত্র। আপনি এটিকে স্রষ্টা বা সৃষ্টি বলতে পারেন, অথবা বলতে পারেন আপন সত্তা - এতে কিছু যায় আসে না। এই ক্ষেত্রটি  'এটি' বা 'ঐটি'-এর অতীত,'আমি' এবং 'আপনি'-এর অতীত, 'এখানে' এবং 'সেখানে'-এর অতীত, 'হ্যাঁ' এবং 'না'-এর অতীত। এটি শুধুমাত্র 'হ্যাঁ' এবং 'হ্যাঁ' এর ক্ষেত্র। এই হলো শিব।

      প্রথম যোগীঃ
অন্য এক স্তরে, যখন আমরা "শিব" বলি, আমরা নির্দিষ্ট এক যোগী, আদিযোগী  বা প্রথম যোগী এবং আদি গুরু অর্থাৎ প্রথম গুরুর উল্লেখ করছি, যিনি আজ যোগ বিজ্ঞান হিসাবে আমরা যা জানি তার উৎস। তিনি এই গ্রহের ছিলেন না। তিনি কৈলাস নামক ভিন্ন এক জগৎ হতে এসেছিলেন।
  তিনি কেন এলেন? 
সম্ভবত তিনি এমন একটি গ্রহ দেখেছিলেন যা বিভ্রান্ত মানুষে পূর্ণ ছিল, যারা তাদের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে জানে না। এটা হতে পারে যে,  তিনি তাদের চূড়ান্ত সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। অথবা হতে পারে, পৃথিবী ছিল তার ভ্রমণ অভিমুখে প্রথম স্থান।  অথবা সম্ভবত, তাকে ডাকা হয়েছিল। হয়তো তিনি পৃথিবীর মানুষদের ভেতরের কান্না শুনতে পেয়েছিলেন এবং তাদের তীব্র আকুলতার উত্তর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এত বিশাল এবং সামর্থ্যবান সত্তার ব্যাপারে আমাদের নিকট শুধু অনুমানই অবশিষ্ট থাকে। যখন একজনের সামর্থ্য মহাজাগতিক মাত্রার হয়, তখন প্রতিটি বিশ্লেষণই অপর্যাপ্ত। তিনি হয়তো কোনো মিশন নিয়ে আসেননি। কিন্তু তিনি ছিলেন দূরদর্শিতা সম্পন্ন সত্তা, যা তিনি বিলিয়ে দিতে  চেয়েছিলেন। তিনি প্রায় নয়ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মানুষের রূপ গ্রহণ করেছিলেন। তাকে চড়তে দেখা কেবলমাত্র প্রাণী হল একটি হাতি এবং একটি ষাঁড়। পরম্পরায় তাঁকে স্বয়ম্ভু - স্ব-সৃষ্ট হিসাবে বর্ণনা করে। তাঁর কোনো মাতা-পিতা নেই, কোনো বংশ নেই, কোনো বর্ণ নেই,নেই কোনো সম্প্রদায় । নিয়তির প্রভাবের নিকট তিনি উপলব্দ নন। তিনি কর্মের প্রভাবের নিকট উপলব্ধ নন। তিনি জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার জন্যও উপলব্ধ নয়। তার জীবন স্ব-নির্মিত। 
মৌলিকভাবে, যোগের ভিত্তি হল এটি: স্ব-সৃষ্টির একটি প্রক্রিয়া শুরু করা, যেখানে আপনার শরীরের প্রকৃতি, আপনার আবেগ, আপনার মন, আপনার শক্তি সচেতনভাবে আপনার দ্বারা তৈরি করা হয়। আদিযোগী এটাই করেছেন। তিনি তার জীবনকে সম্পূর্ণরূপে তৈরি করেছিলেন।তিনি একা আসেননি, তাঁর সাথে ছিল তাঁর বন্ধুরা যারা গণ নামে পরিচিত। পরম্পরা তাদেরকে বিকৃতাঙ্গ প্রাণী হিসাবে চিত্রিত করেছে। মানুষের রূপ গ্রহণে তারা মাথা ঘামায়নি। অথবা সম্ভবত, তারা আদিযোগীর মতো মানুষের রূপ আয়ত্ত করতে পারেনি। তারা তাদের নিজস্ব দেহ তৈরি করেছিল, কিন্তু তাদের রূপগুলির কোন নির্দিষ্ট আকার ছিলনা। তারা পৃথিবীতে পুরোটা সময় জোড়ে আদিযোগীর সাথে ছিল। তারা কি রূপ ধারণ করেছে তা বিবেচ্য নয়; তারা সবসময় তাঁর সবচেয়ে কাছের ছিল।আদিযোগী হিমালয়ের উপরিভাগকে বসবাস করার জন্য বেছে নেন। একটি পর্বত যা কৈলাস নামে পরিচিত, তা ছিল তাঁর বাসস্থান। আদিযোগীর মূল উৎপত্তিস্থলের নামানুসারে এই পর্বতেরও নামকরণ করা হয় কৈলাশ। এই পর্বত হয়ে ওঠে তাঁর অপিরিমেয় জ্ঞানের অবিশ্বাস্য ভান্ডার। বেশির ভাগ সময়ই তাঁর চোখ বন্ধ থাকত। তিনি যখন পরমানন্দে থাকতেন, তখন তিনি নাচতেন। পরমানন্দের অতীত চলে গেলে তিনি একদম স্থির হয়ে যেতেন।
যোগ ঐতিহ্যের উৎস হিসেবে মানুষের চেতনা তৈরির ক্ষেত্রে তার অবদান এত বিষ্ময়কর যে তা অস্বীকার করা অসম্ভব। মানবজীবনকে তার সর্বোচ্চ সম্ভাবনাতে রূপান্তরিত করার সম্ভাব্য সকল পদ্ধতি হাজার হাজার বছর আগে চর্চা করা হয়েছিল। এর সুচারুতা অবিশ্বাস্য। সেই সময়ে মানুষ এত পরিশীলিত ছিল কিনা সে প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক, কারণ এটা একটা নির্দিষ্ট সভ্যতা বা চিন্তার প্রক্রিয়া থেকে আসেনি। এটা একটা অভ্যন্তরীণ উপলব্ধি থেকে এসেছিল। চারপাশে কি ঘটছে তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক  ছিল না। এটা ছিল শুধু নিজেকে ঢেলে দেওয়া। তিনি বিস্তারিতভাবে মানবতন্ত্রের প্রতিটা বিন্দু দিয়ে কি কি করতে পারা যায় তার  অর্থ ও সম্ভাবনা বর্ণনা করেছেন । আজও কেউ এর একটা জিনিসও পরিবর্তন করতে পারবেন না কারণ তিনি এমন সুন্দর এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা বলেছেন। কেউ শুধুমাত্র তার জীবনকালব্যাপী এটার রহস্যোদ্ধার করার চেষ্টা করতে পারেন মাত্র। আদিযোগী যখন তার চূড়ান্ত সম্ভাবনায় পৌঁছেছিলেন, তখন অনেকেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলেন সেই সাতজন ঋষি যাঁরা তাঁর জ্ঞানকে প্রাপ্ত করার জন্য এবং তা বিশ্বের অন্যান্য স্থানে সঞ্চারিত করার পাত্র হয়েছিলেন। এরা হলেন সপ্তর্ষি হিসেবে পরিচিত ঋষিরা: অগস্ত্য মুনি, অত্রি, অঙ্গিরা, ভৃগু, গৌতম মহর্ষি, কশ্যপ এবং বশিষ্ঠ। শিব যোগ-বিজ্ঞানকে তার এই সাত শিষ্য - সপ্তঋষিগণের মধ্যে সঞ্চারিত করলেন - কান্তি সরোবরের তীরে, সেই হ্রদ যা হিমালয়ের কেদারনাথের কয়েক কিলোমিটার উপরে। সেটাই ছিল প্রথম যোগ কর্মশালা। কিছু লোকে বলেন এটা ঘটেছিল ৬০,০০০ বছর আগে। অন্যরা বলেন ৩০ বা ৩৫,০০০ বছর আগে। কিন্তু, আমরা নিশ্চিত যে অন্তত ১৫,০০০ বছর আগে।
সপ্তঋষিগণ বিভিন্ন কলা ও বিজ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন। সভ্যতার বিকাশে  সেই সময়ের বিজ্ঞান, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং বৈজ্ঞানিক  উৎকর্ষ সাধনে তাদের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। শিব এই সাতজন ঋষির আত্মজ্ঞান লাভের পরে উনাদেরকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেন। তিনি একজনকে মধ্য এশিয়ায় পাঠালেন, আরেকজনকে উত্তর আফ্রিকায় যা বর্তমানে ইথিওপিয়া বা মিশর এবং মধ্যপ্রাচ্য নামে পরিচিত, আরেকজনকে পাঠালেন দক্ষিণ আমেরিকায়, আরেকজনকে দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায়, আরেকজন শিবের সাথেই থাকলেন, একজন নেমে আসলেন হিমালয়ের নিচের অংশে এবং  আরেকজন ভারতের দক্ষিণে নেমে এলেন – তিনি ছিলেন অগস্ত্য মুনি। যিনি সিদ্ধ বৈদ্য এবং রস বৈদ্য- নামের দুটি চিকিৎসা পদ্ধতির জনক, যেগুলি তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান। আত্মজ্ঞান লাভের পরে তিনি বিশ্বের এই অংশের সাথে তার উপলব্ধি ভাগ করে নিতে ফিরে আসেন। দক্ষিণ ভারতের আধ্যাত্মিকতার জনকও বলা হয় তাঁকে। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে তিনি যোগ এবং আধ্যাত্মিকতাকে এমনভাবে বপন করেছেন যে  আজও এর তীব্র প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। শিবের এই সাতজন শিষ্য - সপ্তঋষিদের মাধ্যমে পরবর্তীতিতে মানব সভ্যতায় বিশাল মাত্রা যুক্ত হয়। যদি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তবে শিবের জ্ঞান এবং পদ্ধতিগুলির প্রকাশ দক্ষিণ আমেরিকার মতো সুদূর সভ্যতায়ও লক্ষ্য করা যায়। গ্রীকরা যখন 300 খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে ভারতে এসেছিল, তখন রহস্যময় শিবের মধ্যে তারা তাদের নিজস্ব ঈশ্বর ডায়োনিসাসের প্রতিফলন দেখেছিল, একজন পাগলাটে বিদ্রোহী যিনি তার নিজের গণদের দ্বারা বেষ্টিত ছিলেন যারা স্যাটার নামে পরিচিত ছিল। শিবের মতো তিনিও পাহাড়, গাছ, মৌমাছি, নদী, মদ, নৃত্য ও থিয়েটারের প্রভু ছিলেন। তিনিও আনন্দময় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তি অন্বেষণ করেছিলেন। তার রহস্যপূর্ণ কাল্টগুলি অর্ফিজমের আকার ধারণ করেছিল যা খ্রিস্টান ধর্মানুষ্ঠান এবং যোগাযোগের আচারগুলিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।
পৃথিবী জুড়ে এই সাতজন ঋষির কাজের উপস্থিতি আজও দৃশ্যমান। এটা শুধু অনেকগুলো রূপ নিয়েছে মাত্র। এটা আশ্চর্যজনক যে আজও গ্রীসের মন্দিরে, লেবাননের বালবেক মন্দিরে, মিশরের নির্দিষ্ট কিছু মন্দিরে, আপনি এখনও যোগিক প্রতীক দেখতে পাবেন – ১৬টি কোণের গুরু পূজার পাথর যা অন্য কোথাও থেকে আসতে পারে না সেই জ্ঞান ব্যাতীত যা আদিযোগী শিব নিজেই হস্তান্তর করেছিলেন। ব্রিটিশ নৃতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংগৃহীত আইকনোগ্রাফিক প্রমাণগুলি বলে যে রুদ্র রূপে শিব পৃথিবীর প্রাচীনতম দেবতা। আইকনোগ্রাফি বলছে এটি ১২,০০০ (বারো হাজার) বছরের বেশি। তিনি এই ভারতবর্ষ বা ভারতীয় উপমহাদেশ বলে যা আজ পরিচিত তার বাসিন্দাদের দেবতা ছিলেন। ৮,০০০ বছর আগে যখন আর্য আক্রমণকারীরা এসেছিল, তখন তাদের দেবতা ছিল ইন্দ্র। তারা স্থানীয়দের সামরিকভাবে পরাজিত করেছিল, তাদের উপর রাজনৈতিকভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তাদের বিভিন্নভাবে দাসত্বে জড়িয়েছিল, কিন্তু তারা পরাজিতদের দেবতাকে গ্রহণ করেছিল। মানবতার ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে বা পরে আর কখনও হয়নি। আক্রমণকারীরা সর্বদা তাদের দেবতাকে পরাজিতদের উপর চাপিয়ে দেয়। কিন্তু এখানে পরাজিতদের দেবতাকে গ্রহণ করেছিল আক্রমণকারীরা। বিজয়ীরা পরাজিতদের দেবতাকে গ্রহণ করেছিল কারণ তিনি যা নিবেদন করেছিলেন তার সারমর্মটি এত মূল্যবান ছিল যে, তারা তাঁকে উপেক্ষা করতে পারেনি। যা দেওয়া হচ্ছিল তার শক্তি এবং সম্ভাবনা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে বিজয়ীরা পরাজিতদের দেবতাকে গ্রহণ করেছিল। তিনি যে পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি প্রেরণ করেছিলেন তার চেয়ে ভাল প্রামাণ্য আর হতে পারে না।

  - সুতরাং শিব  যা নয় সেটা এবং আদিযোগী উভয়কেই বোঝায়, কারণ অনেক ভাবেই তারা সমার্থক। এই  সত্তা, যে একজন যোগী  এবং সেই সত্তাহীনতা যা অস্তিত্বের ভিত্তি, উভয়ই এক। কারণ কাউকে যোগী বলা মানে তিনি নিজের মধ্যে অস্তিত্বকে অনুভব করেছেন। একটা মুহুর্তের জন্যেও যদি আপনাকে নিজের মধ্যে শূন্যতা ধরে রাখা অনুভব করতে  হয়,তবে আপনাকে সত্তাহীন হতে হবে। শুধুমাত্র শূন্যতাই সবকিছু ধরে রাখতে পারে। অল্পকিছু সবকিছুকে ধরে রাখতে পারে না। একটা পাত্র সমুদ্র ধরে রাখতে পারে না। এই গ্রহ একটা মহাসাগরকে ধরে রাখতে পারে, তবে এটা সৌরজগতকে ধরে রাখতে পারে না। সৌর জগৎ এই কয়েকটা গ্রহ এবং সূর্যকে  ধরে রাখতে পারে, তবে এটা বাকি ছায়াপথকে  ধরে রাখতে পারে না। আপনি যদি এরকম ক্রমশ যান, তবে অবশেষে আপনি দেখবেন কেবলমাত্র শূন্যই সমস্তকিছু ধরে রাখতে পারে। "যোগ" শব্দটার অর্থ "মিলন"। তিনিই যোগী যিনি এই মিলনের অনুভব অর্জন করেছেন। তার মানে, অন্তত এক মুহুর্তের জন্যে হলেও তিনি সম্পূর্ণ শূন্যতা অনুভব করেছেন।

যখন আমরা শিব কে  যা নয় সেটা বা যোগী বলে উল্লেখ করি, এক অর্থে তাঁরা সমার্থক, কিন্তু তবুও তাঁরা দুই ভিন্ন বৈশিষ্ট। 
কারণ ভারতবর্ষ একটি তর্কমূলক সংস্কৃতি, আমরা এক ভাবনা থেকে অন্য ভাবনায় অনায়াসে যাতায়াত করি । এক মুহুর্তে আমরা শিবকে  সর্বোত্তম বলি, পরের মুহূর্তে আমরা শিবকে এমন এক একজন হিসেবে জানি যিনি আমাদের যোগের এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি দিয়েছেন। আদিযোগী শুধু এই জন্য তাৎপর্যপূর্ণ নন যে তিনি আত্মজ্ঞান লাভ করেছিলেন, বরং এই কারণে যে তিনি সেই সম্ভাবনাকে তার তৈরি করা পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে সকলের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। কারণ সচেতন হওয়া এক জিনিস, জানা আরেক জিনিস, আর কী করে জানতে হয় তার এক সুসংগঠিত পদ্ধতি সৃষ্টি করা এক সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। মানুষের পরম প্রকৃতির দিকে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অগ্রসর হওয়াকে তিনি সম্ভব করেছিলেন। অস্তিত্বের বিভিন্ন মাত্রাকে সুস্পষ্টভাবে অনুসন্ধান করে একটি সুসংগঠিত পদ্ধতি তৈরি করেন, যা কিনা মানব কল্যাণের এক শাস্ত্র বা এক বিজ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ১১২টি মৌলিক উপায় ব্যাখ্যা করেন এবং সেটির থেকে অনেক শাখা-প্রশাখা তৈরি হয়েছে যেগুলো আজ প্রচলিত। তার আগে বা তার পরে আর কেউ এত স্পষ্ট ভাবে ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করেননি। সেই জন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।

শিবের অলঙ্করণঃ
তৃতীয় চক্ষুঃ শিবকে সর্বদা ত্র্যম্বক বলা হয় কারণ তার তৃতীয় চক্ষু রয়েছে। তৃতীয় চক্ষু মানে এই নয় যে, কারো কপাল ফেটে কিছু বেরিয়েছে! এর সহজ অর্থ হল উপলব্ধির আরেকটি মাত্রা খুলে গেছে। দুই চোখ দেখতে পায় যা কেবল ভৌত। আমরা যদি কেবল আমাদের হাত দিয়ে তাদের ঢেকে রাখি তবে তারা এর বাইরে দেখতে পারবে না। তারা কতটাই না সীমাবদ্ধ। যদি তৃতীয় চোখ খোলে যায় তবে এর অর্থ উপলব্ধির আরেকটি মাত্রা যা অভ্যন্তরীণ দৃষ্টি এবং জীবনকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখে, এটি খুলে গেছে তো যা উপলব্ধি করা যায় তাই উপলব্ধ। আরেকটা দিক হল চক্ষু ইন্দ্রিয়গুলো গভীরভাবে কর্মের দ্বারা কলুষিত। কর্ম মানে হল অতীত কাজের পড়ে থাকা অবশিষ্ট স্মৃতি। আপনি যা কিছু দেখতে পান- সে সবকিছুই এই অবশিষ্ট কার্মিক স্মৃতির দ্বারা প্রভাবিত। আপনি এর থেকে ছাড়া পাবেন না। আপনি যদি কারো দিকে তাকান, আপনি ভাববেন - উনি সুন্দর, উনি সুন্দর নন, উনি ভালো, উনি মন্দ। আপনি কোন কিছু ঠিক যেভাবে আছে, সেভাবে দেখতে পাবেন না। কারণ- কার্মিক স্মৃতি আপনার দৃষ্টি শক্তিকে প্রভাবিত করে এবং আপনার দেখার সামর্থ্যকেও। এগুলো শুধুমাত্র আপনাকে আপনার কর্মের পরিপ্রেক্ষিতেই সবকিছু দেখাবে, আপনার পূর্ব স্মৃতি অনুযায়ী। সমস্ত কিছু যথাযথ ভাবে দেখতে হলে একটা তীক্ষ্ণভেদী নেত্র উন্মীলিত করতে হবে, যা স্মৃতি দ্বারা কলুষিত নয়। ঐতিহ্যগতভাবে ভারতবর্ষে জ্ঞান লাভের অর্থ বই পড়া বা কারোর বক্তৃতা শোনা নয়, অথবা তথ্য সংগ্রহ করাও নয। জানার অর্থ হল জীবন সম্পর্কে একটা নতুন দূরদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করা। কোনরকম গভীর চিন্তা বা দার্শনিক ভাবধারা আপনার মনে স্বচ্ছতা আনতে পারবে না। যে যৌক্তিক স্পষ্টতা আপনি তৈরি করেন, সেটা খুব সহজেই বিকৃত হতে পারে। জটিল পরিস্থিতি এটাকে তুমুল আলোড়ন এর মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারে। প্রকৃত স্বচ্ছতা তখনই জেগে ওঠে যখন আপনার অন্তর্দৃষ্টি উন্মীলিত হয়। পৃথিবীতে কোন পরিস্থিতি বা কোন ব্যক্তিই আপনার অন্তরে এই স্বচ্ছতা বিকৃত করতে পারে না। প্রকৃত জ্ঞানের উন্মেষের জন্য আপনার তৃতীয় নেত্রের উন্মীলন অত্যন্ত জরুরী। 

কোন মন্তব্য নেই

thanks. please visit again

Blogger দ্বারা পরিচালিত.